A ads 1

Sunday, July 12, 2020

A REAL LOVE STORY এই জীবনে জানার কোনো শেষ নাই ।

এই জীবনে জানার কোনো শেষ নাই, এই কথাটা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম আমার মেজো এক্সের সাথে দেখা হওয়ার পর।

ঢাকা থেকে রাজশাহী আসছি। ধূমকেতু এক্সপ্রেসের ঘ নম্বর বগিতে বসে আছি। মুখোমুখি সিট পাওয়াতে কিছুটা বিরক্ত। ট্রেনে উঠে বই পড়ার অভ্যাস বহুদিনের। সিটে বসেই বই মেলে ধরলাম মুখের সামনে। বইয়ের মলাটে লেখা আছে, ইন দ্য লাইট উই সি, লেখক: জিয়া হায়দার রহমান। কিন্তু মলাটের ভেতরে আছে অন্য জিনিস। কাশেম বিন আবু বকরের পাহাড়ী ললনা।




কিছুক্ষণ পর টাকমাথার আঙ্কেল টাইপের একটা লোক এসে সামনের সিটে বসেই হাত বাড়িয়ে দিলো। বললো, আমি মাহমুদুল হাসান পিএইচডি।
আমি মৃদু হেসে আবার বইতে মনোযোগ দিলাম।

কিছুক্ষণ পর শাড়ি পড়া ভাবী টাইপের এক মহিলা এসে উনার পাশে বসলো। না, চিনতে ভুল করিনি। আমার মেজো এক্স ছিলো। মেয়েরা সবকিছুই খুব স্বাভাবিকভাবে নিতে পারার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। এক্স আমাকে কিছু মনেই করলো না, বসে স্বামীর সাথে গুজুরগুজুর করতে লাগলো। যেন ট্রেনে এক্সের সাথে দেখা হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

ঝামেলা শুরু করলো এক্সের স্বামী, মাহমুদুল হাসান পিএইচডি। এই লোক রাজনীতি, সমাজনীতি, খেলা থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ে বকবক করতে বিশেষ পারদর্শী। আমি বই বন্ধ করে বকবক শোনার প্রস্তুতি নিলাম।

আমি মাঝেমধ্যেই এক্সের দিকে তাকাচ্ছি আড়চোখে।
সেটা খেয়াল করেই হয়তো, মাহমুদুল হাসান পিএইচডি বললেন, বুঝলেন ভাইসাহেব, আমার বউটা একেবারেই চুপচাপ, কথাই বলতে চায় না। আর বেগানা পুরুষের সাথে তো কথাই বলে না।

মানুষ আকাশ থেকে পড়ে।
এই কথা শুনে আমি পড়লাম মঙ্গল গ্রহ থেকে।
আমার স্পষ্ট মনে আছে, এই কম কথা বলা মেয়ের সাথে ফোনে রাত্রিকালীন অভিসারের জন্য আমাকে বাপের পকেট থেকে মাসে চুরি করতে হতো পাক্কা চার হাজার টাকা। আর কলেজে পড়ার সময় এই ছেলেদের সাথে কথা না বলা মেয়েটাই আমাকে আগে এসে প্রপোজ করেছিলো।কলেজের ছেলেরা পর্যন্ত ওকে ভয় করতো।কঠিন নারীবাদী ছিলো একবার এক ছেলে ওকে শিষ দেওয়াতে ঐ ছেলের হাত ভেঙে দিয়েছিলো। নিউ ডিগ্রি কলেজের সতেরো ব্যাচের সবাইই ঘটনা জানে।

For more stay with us.


আমি তব্দা খেয়ে বসে আছি। ওদিকে এক্স অনেকটা দার্শনিক দার্শনিক টাইপের মুখের ভাব নিয়ে চুপচাপ বসে আছে জানালার ধারে।

চুপ করছেন না কেবল মাহমুদুল হাসান পিএইচডি, উনি বলতেই আছেন, বুঝলেন সাদিক ভাই, এত ইনোসেন্ট মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি, বিয়ের পর একদিন হলে সিনেমা দেখতে নিয়ে গেলাম।সিনেমা হল দেখে তো আপনার ভাবী অবাক!! কী বুঝলেন ভাই? জীবনেও কোনদিন সিনেমা হল দেখেনি এই মেয়ে। আপনিই বলেন, এই যুগে এমন মেয়ে পাওয়া সম্ভব?

আমি মৃদুস্বরে বলি, আসলেই সম্ভব না।

আমি শুধু ভাবি রাজশাহীর উপহার সিনেমা হলের কথা, সিনেমা হলের পাশাপাশি দুটো চেয়ারের কথা।উত্তাল সেই প্রেমের দিনগুলোতে আমরা প্রায়ই উপহারে বসে সিনেমা দেখতাম। একদিন উপহার হল ভেঙে ফেলা হলো, সেই শোকে আমার এক্স দুই দিন ভাত না খেয়ে ছিলো। শেষমেশ স্টার সিনপ্লেক্সে মুভি দেখাতো নিয়ে যাবো, এই ওয়াদা করে ওর অনশন ভাঙিয়েছিলাম।

মাহমুদুল হাসান পিএইচডি বললেন, আমাদের বিয়ের গল্পটা শুনবেন সাদিক ভাই? আমি মাথা দোলাই। ট্রেনের মুখোমুখি সিটে বসে, এক্সের স্বামীর কাছে তার বিয়ের গল্প শোনার সৌভাগ্য এই পৃথিবীতে কজনের হয়?

মাহমুদুল হাসান পিএইচডি বলতে শুরু করলেন, বুঝলেন ভাই, চাকরি পাওয়ার পরই আম্মা বিয়ের তোড়জোড় শুরু করলো। যতই বলি বিয়ে করবো না, ততই চেপে ধরে। শেষপর্যন্ত মেয়ে পাওয়া গেলো রাজশাহী। মেয়ে দেখতে আমিও এসেছি, মেয়ের মা মানে আমার শ্বাশুড়ি বললেন, মেয়ে আমার খুবই লাজুক, পুরো জীবনে একটা ছেলের সাথেও কথা বলেনি।

আমার মা অমনি বলে ফেললেন, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। এই যুগে এমন সোনার টুকরা মেয়ে আর দুইটা আছে নাকি?

কিন্তু আমি বিশ্বাস করলাম না। এতো রূপবতী একটা মেয়ে, ছেলেদের সাথে কথা বলবে না কেন? মেয়ের মায়ের কথা শুনে আমার সন্দেহ হলো। আমি মেয়েকে জিগাইলাম, এই মেয়ে তোমার নাম কী? লজ্জায় মেয়েটার মুখ টুকটুকে লাল হয়ে গেলো, কোনোরকমে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, তুলি!!

বিশ্বাস করেন সাদিক ভাই, আমি আমার পুরো জীবনে এতো লজ্জা কোনো মেয়েকে পাইতে দেখিনি। দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো। এই যুগে এরকম মেয়ে আর পাবো, বলেন?

মানুষ অধিক শোকে পাথর হয়, আমি ততক্ষণে লোহা হয়ে বসে আছি।

মাহমুদুল হাসান পিএইচডি তখনও থামেননি, তিনি বলে চলেছেন, জানেন, আপনার ভাবীর ফেসবুক একাউন্টও ছিলো না, আমি খুলে দিয়েছি বিয়ের পর। এমনকী টিভিও দেখে না, খুবই ধার্মিক টাইপের মেয়ে ভাইজান। মাঝেমধ্যেই নিজের উপরই নিজের হিংসে লাগে, এতো ভালো বৌ ভাগ্য নিয়ে কেউ আসে?

আমি তব্দা খেয়ে বসে থাকি। কী বলবো? কী বলা উচিত?

কলেজে পড়ার সম্পর্কে একবার সিরিয়ালের কিরণমালাকে গালি দিয়েছিলাম, সেই অপরাধে এক্স আমার সাথে চারদিন কথা বলেনি। ফেসবুকে ও মিনিটে মিনিটে ছবি আপ্লোড দিতো, এটা নিয়ে কম ঝগড়া হয়েছিলো আমাদের? বোরকা পরে ছবি দিতে বলায় ও একবার আমাকে চিপ মাইন্ডেড বলেও গালি দিয়েছিলো, সেটাই বা ভুলি কী করে?

ধূমকেতু এক্সপ্রেস দীর্ঘ হুইসেল দিয়ে জানান দেয়, আমরা রাজশাহীতে পৌছে যাবো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। এক্স আর এক্সের স্বামী ব্যাগ গোছানো শুরু করেছে। আমিও উঠে দাঁড়াই। মাহমুদুল হাসান বলেন, আচ্ছা ভাইজান, রাজশাহীতে ঘোরাঘুরি করে প্রেম করার জায়গা কোথায়? বুঝতেই পারছেন ছাত্রজীবনে প্রেম করিনি, বউয়ের সাথে প্রেম করবো বলে। ওদিকে বউ নাকি কখনও বাড়ির বাইরেই বের হয়নি, নিজের শহরটাও ঠিকঠাকমতো চেনে না, এই বউটাকে নিয়ে আমি কী করি বলেন তো!! আবেগে মাহমুদুল হাসানের দুই চোখ ঝলমল করে।

আমি পদ্মার ধারের কথা বলি, রাজশাহী চিড়িয়াখানার কথা বলি, রাবির পশ্চিমপাড়ার কথা বলি, ভদ্রা পার্কের কথা বলি। বেশিরভাগ সময় এক্সের সাথে ওদিকেই প্রেম-ট্রেম করতাম আর কি!! এমনকী চিড়িয়াখানার বানরগুলোও আমাদের চেনে, হাজারবার দেখেছে। ভাগ্যিস, বানরেরা কথা বলতে পারে না!!

চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন থামলো।
দু দুটো বিশাল ব্যাগ হাতে নিয়ে মাহমুদুল হাসান পিএইচডি আর আমার মেজো এক্স, সামিরা জাহান তুলি, গটগট করে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আমি ওদের চলে যাওয়া দেখি।

মেয়েটার সাথে দু বছর প্রেম করেও মেয়েটার এতো নিষ্পাপ মন বুঝতে পারলাম না আমি!! কত কিছু অজানাই থেকে যেতো!! এইজন্যই বলে, মেয়েদের কখনও জাজ করতে নেই, তাদের শুধু ভালোবাসতে হয়।

বুকের মধ্যে তীব্র হাহাকার টের পেলাম।
সেটা এতো ইনোসেন্ট একটা মেয়েকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার জন্য আফসোস নাকি মাহমুদুল হাসান পিএইচডির এতো বড় সৌভাগ্য দেখে হিংসা? জানি না।
আমি বাড়ির পথে পা বাড়াই।

পরিশিষ্ট:
সাড়ে চার বছরের বেকার জীবন শেষ হলো।
যতই বলি বিয়ে করবো না, আম্মু ততো বেশি চেপে ধরে। শেষমেশ মেয়ে দেখতে গেলাম।

আম্মু, খালা, খালুর সাথে মেয়ের বাসায় বসে আছি।

এর মধ্যে রিনিকঝিনিক ঢেউ তুলে নীল শাড়ি পড়া এক অপূর্ব রূপবতী ঘরে এসে ঢুকলো চা হাতে। মেয়ের মা বললো, আমার মেয়েটা খুব লাজুক ভাবী, জীবনেও কোনো ছেলের সাথে কথা বলেনি। এই যুগে এমনকী ফেসবুক একাউন্টও নাই। সারাদিন ঘরে থাকে, টিভি সিরিয়াল দেখার অভ্যাসও নাই।

আমার বুকে ততক্ষণে চিনচিনে ব্যথা শুরু হয়েছে। হার্টফেইল হচ্ছে না তো?

আমি কিছু বলার আগেই পাশ থেকে আম্মু বলে উঠলো, শুকুর আলহামদুলিল্লাহ। মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। এই যুগে এমন সোনার টুকরা মেয়ে আর দুইটা আছে নাকি?

No comments:

Post a Comment