স্যার প্রাইভেট পরাবেন সকাল ৬ টায়...। ইস, সকালে ঘুম থেকে ওঠা যে কি বিরক্তিকর তা তখন হারে হারে টের পেতাম। ঘুম থেকে উঠেও গুমিয়ে গুমিয়ে প্রাইভেট পড়তে যাই।ভালই চলছিলো। হটাৎ করে একদিন খেয়াল করলাম প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় আমাদের পিছন পিছন একটা ছেলেও আসে। কিছুদিন পর্যন্ত বিষয়টারআগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না....। বান্ধবি আমরা চার জন.. ছেলেটা আসে কার জন্য?তা তখনো খুলসা না। এইভাবে বেশকিছু দিন যাওয়ার পর, বুঝতে পারলাম ছেলেটা আমার জন্যই আসে। "কে কার পিছে গুরছে,, কে কাকে দেখছে? মেয়েরা এসব খুব ভালো করে বুঝতে পারে"। এই পাওয়ার সব মেয়েদেরই আছে মনে হয়। বান্ধবিরাও বুঝতে পেরে গেলো। আর বুঝতে পারার সাথে সাথে এই নিয়ে তারা আমার সাথে মজা করা শুরু করে দিলো। তবে এইযে ছেলেটা পিছন পিছন আসে, মুখে কিছু না বল্লেও, বিষয়টা কিন্তুু আমার ভালোই লাগতো...।আমার এখনো মনে আছে, সে আমার পিছনে প্রায় ৩ মাসের মতো গুরেছিলো। তারপর আমাদের স্কুলে স্পোর্টস হওয়ার সময় হলো।যদিও আমি কখনোই কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করতাম না।
স্পোর্টস এর দিন খুব সেজে গুজে গেলাম স্কুলে। দুপুরের দিকে সেও তার বন্ধুদেরকে নিয়ে খেলা দেখতে আসলো স্কুলে.....। স্পোর্টস শেষ হলো,,।তখন প্রায় সন্ধা। বারিতে আসার জন্য রাস্তায় উঠলাম...। সাথে এক ঝাক বান্দবি...। হটাৎ করে পিছন থেকে কেউ ডাক দিলো আমার নাম ধরে....।তখন ভয়ে আমার আত্না উরে যাওয়ার অবস্থা। একবার সবাই পিছন ফিরে তাকিয়ে আবার হাটা শুরু করলাম.....। ২ মিনিট পর আবার কেউ নাম ধরে ডাকছে। সবাই এক সাথে দারালাম...। ৪/৫ জন ছেলে আমাদের কাছে আসলো। সেও আছে সেখানে,কিন্তু সে আমাকে ডাক দেয়নি,, ডাক দিয়েছে তার আরেক বন্ধু।৪/৫ জন ছেলেত মাঝখান থেকে এক ছেলে আমার দিকে তার হাত বাড়িয়ে দিলো। দেখলাম হাতে একটা কাগজ...। ছেলেটা বল্লো,এইটা কাগজ টা নেন,,। আমি আর ধরিনা। নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। আর আমার বান্দবিরা সব আমার দিকে তাকিয়ে আছে,...।
ছেলেটা যখন দেখলো আমি কাগজ টা ধরছি না,,তখন আমার আরেক বান্ধবির হাতে কাগজটা দিয়ে বললো, এই নেন আপনাদের বান্ধবিকে বলবেন,, এই কাগজটা যেনো বাড়িতে গিয়ে খুলে। বারিতে এসে কাগজ খুলে দেখলাম কাগজে একটা নাম্বার লেখা। সেই নাম্বারটা এখনো আমার মুখস্থ,চেষ্টা করেও ভুলতে পারিনি। তখন আমার মুবাইল নাই। মায়ের মুবাইল দিয়ে বান্ধবিদের সাথে মাঝে মাঝে দরকারি কথা বলি। প্রথম ভেবেছিলাম কাগজ টা ছিরে ফেলি। কি ভেবে যেনো ছিরলাম না, বইয়ের ভিতর রেখে দিলাম। দুইতিন দিন পর থেকে ফলো করলাম, ছেলেটা আর আমার পিছনে ঘুরছে না,, সে আমার সামনে দিয়ে গুরছে। আমাকে আগের মতো আর পাত্তা দিচ্ছে না। আমিতো মনে মনে রাগে ফায়ার। এভাবে তিন চারদিন গেলো।একদিন রাতে বইয়ের ভিতর থেকে সেই কাগজটা হাতে নিলাম। আমার একদম মনে আছে, তখন রাত ১০ টা বাজে। মায়ের মুবাইল দিয়ে চুপি চুপি তার নাম্বারে একটা মিসকল দিলাম। বেক করলোনা,,৫ মিনিট যাওয়ার পরে আবার ডিড়েক্ট কল দিলাম,, এবার সে রিছিব করলো...। ফোন ধরার পর আমি তাকে কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সে হেলো হেলো করতে থাকলো। ১ মিনিট চুপ করে থেকে লাইন কেটে দিলাম। সে বুঝতেও পারলো না যে এটা আমি ছিলাম.....।
পরেরদিন স্কুলে যাওয়ার সময় তাকে দেখলাম রাস্তায়। তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়, টেকনিক খাটিয়ে এক বান্দবিকে দিয়ে ঝুরে ঝুরে বলালাম, যে আমার নাম্বারের শেষে ৪২.......। তখন সে বুঝতে পারলো যে গত রাতে আমিই তাকে কল দিছিলাম। সেই দিন থেকেই শুরু হলো তার সাথে রাত জেগে কথা বলা। একাই থাকতাম আমি। কতো কষ্ট করে যে মায়ের মুবাইল চুরি করতাম, সেইসব ঘটনা মনে হলে এখনো একা একাই হাসি..। এমনও সময় গেছে যে ফোনে কথা বলতে বলতে খাট থেকে পড়ে গেছি। আস্তে আস্তে দেখা করাও শুরু হলো। এই চিপায়, অই চিপায় দাড়ায়া দাড়ায়া কথা বলতাম। অনেকবার ধরা খেতে গিয়েও ধরা খাইনি,..। এইসব করতে করতেই ক্লাস টেইনে উঠলাম। রেসাল্ট খুবই খারাপ হলো, তাতে অবশ্য আমার কোনো মন খারাপ নাই। আমি আছি তখন প্রেম নিয়ে...। ক্লাস টেইনে উঠার পর মনে হয় এমন একদিন ছিলোনা যেদিন আমার তার সাথে দেখা হয়নি। শুক্রবারে স্কুল বন্ধ থাকায় সে আমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়ে থাকতো....। কি সুন্দর ছিলো সময় গুলা,চোখের সামনে এখনো ভাসে স্মৃতি গুলা। দেখতে দেখতে এসএসসি দেওয়ার সময় চলে এলো। পরিক্ষার কিছুদিন আগে হটাৎ করেই আমার মা স্ট্রুক করে মারা গেলেন। একদম ভেঙে পরলাম আমি। কিসের পরিক্ষা,কিসের কি?আমার মা মারা গেছে, এটা আমি কিচ্ছুতেই মানতে পারছিলামনা। এখনো মানতে পারিনা। দিন রাত কান্না করে পার করতাম। মিথ্যা বলবোনা,,সে প্রথম প্রথম আমাকে অনেক সাপোর্ট দিতো,পাশে থাকতো। পরিক্ষা দিলাম, পাশও করলাম......।সে ততদিন পর্যন্ত আমার পাশেই ছিলো। তখন সে হনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে...।হটাৎ করে সে বল্লো,তার বাড়ি থেকে চাকরির জন্য চাপ দিচ্ছে। তার বরাবরই পুলিশ হওয়ার ইচ্ছা ছিলো,তাই সে পুলিশ হওয়ার চেষ্টা শুরু করলো....।।
সব কিছু ঠিকঠাক হয়েও গেলো, সে ট্রেনিং এ চলে গেলো। ততদিনে আমি ইন্টার ফ্রাস্ট ইয়ার প্রায় শেষ করে ফেলেছি । এম্নিতে সে ট্রেনিং এ ছিলো বলে যোগাযোগ তেমন ছিলোনা। কিন্তু দেখা গেলো ট্রেনিং থেকে আসার পরও আর তেমন ভাবে যোগাযোগ করেনা সে। আমি ফোন দিলে রিছিভ করে ,,কিন্তুু নিজ থেকে ফোন দেয় না। কথায় বিরক্তি প্রকাশ করে। আরো নানান সমস্যা দেখা দিতে থাকলো। আমি বুঝতে পারছিলাম সে আর আমার কাছে থাকতে চাইছেনা। কিন্তুু আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না,। তার বন্ধুদের সাথে কথা বল্লাম, কেউই এইটার কোনো সুলেইশন দিতে পারলোনা, আমি তার কাছে দিনের পর দিন হাত জুর করতে থাকলাম,......৷প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম তাকে। কিন্তুু সত্যি কথা হলো,যে থাকতে চায় না, তাকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায় না,। চলে গেলো সে,.....। কান্না করতে করতে দিন যেতে থাকলো আমার,। কিছুতেই মানতে পারছিলামনা। যে আমার পিছনে এমন ভাবে গুরতো, সে কিভাবে আমাকে একদম ভুলে গেলো,? এসব কিভাবে সম্ভব.......?এইভাবে না খেয়ে দেয়ে, না ঘুমিয়ে, ৪/৫ মাস গেলো।সবসময় তার কথা মনে হতো,, খাওয়ার সময়,ঘুমানুর সময়, গোসলের সময়, এমনকি মুত্তে যাওয়ার সময়। কোনো ভাবেই প্রতারক টাকে ভুলতে পারছিলাম না....।
তারপর নিজে ভালো থাকার জন্য হাজারটা রিলেশন করতে থাকলাম.....অনেক ছেলেকে কষ্ট দিতে থাকলাম, আর কিছুই করার ছিলোনা আমার....। কি করলে ভালো লাগবে, শুধু সেটাই ভাবতাম তখন,। যখন যেই ছেলের সাথে ইচ্ছা হতো, তখন তার সাথেই কথা বলতাম,। এসব করেও কিছুতেই প্রতারক টাকে ভুলতে পারছিলা না।, কেনো সে আমাকে ছেরে গেলো?, কি নাই আমার? শুধু এসব চিন্তাই করতাম দিন রাত।, বিচ্ছেদের প্রায় ৩ বছর হয়ে গেলো,।কিছুদিন আগে তার এক ফ্রেন্ডের সাথে ফেসবুকে এড হলাম,। জিজ্ঞেস করলাম সে কেমন আছে এখন,? তারপর জা যানতে পারলাম, তা শুনে মনে হয়েছিলো,এখুন্নি বিষ খেয়ে মরে যাই,। তার বন্ধু বল্লো, তার মা নাকি আমাকে পছন্দ করতো না,। কারন আমার মা মারা গেছে,.... ওনার ছেলে নাকি শুশুর বাড়িতে জামাই আদর পাবে না।, উনি নাকি উনার ছেলেরে দিয়া মাথায় হাত রাইক্ষা দিব্বি করাইছে, আমার সাথে যেনো কথা না বলে। হায় আল্লাহ, আমার মা মারা গেছে এখানে আমার কি দুষ? তা আমি কোনোভাবেই বুঝতে পারলামনা,,। কেমন মা আর কেমন ছেলে,।এসব ছেলেরাযে কেনো প্রেম করার সময় মাবাবাকে জিজ্ঞেস করে প্রেম করে না, আল্লাই জানে। এমন ছেলের সাথে কেনো সম্পর্ক করলাম, এটা নিয়ে এখন আফছুছ হয় আমার। আরো শুনলাম সে নাকি তার মায়ের পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করতে যাচ্ছে। যাক, তবুও চাই সে ভালো থাকুক, ভালো হোক তার। জামাই আদর পাক ভালো করে। আমার বর্তমান অবস্থার কথা আর কি বলবো... এক্টু ভালো থাকার লোভে প্রেমের নামে একের পর এক সর্টফিল্ম করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি....।মাঝে মাঝে মন চায় নিজের জিবনটা শেষ করে দেই… কিন্তু সেই সাহস নাই আমার.......। ভালো থাকবেন সবাই, দোয়া করবেন আমার জন্য.....